বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আজ ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বাংলা ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রি.
‘মুফতিয়ে আযম আল্লামা শাহ্ সুফি সৈয়দ আমিনুল হক ফরহাদাবাদী মাইজভাণ্ডারী (ক:)’র ৮১তম উরস শরিফ।
মুফতীয়ে আযম আল্লামা সৈয়দ আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (র.)। ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’র আজকের এই পর্যায়ে উপনীত হওয়া তথা মানুষের গ্রহণীয়তার পর্যায়ভুক্তির পেছনে যাঁর ক্ষুরধার লেখনী ছিল অতন্দ্র প্রহরী। যিনি ছিলেন একজন জবরদস্ত মহান কামেল আলেম ও ইসলামি বিধান শাস্ত্র বিশারদ মুফতী। তাঁর ফতোয়া সুদূর মিশরের জামেউল আজহার (আল্ আজহার) বিশ্ববিদ্যালয়ের আলেমগণ কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছিল। এ মহামণীষীর মহান উরস শরিফ আজ। এরই স্মরণে নিম্নে তাঁর সুবিস্তৃত জীবনকর্ম সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা হল:
➤ জন্ম: ১২৭১ বঙ্গাব্দ, ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ, ১২৮৪ হিজরি।
➤ পিতার নাম: আল্লামা শাহ সুফি সৈয়দ আবদুল করিম (ক.), যিনি ‘নাজমে দিলকোশা ফি মিলাদে মোস্তফা (দ.)’ নামক ১৭০০ শ্লোক সমৃদ্ধ মিলাদ শরিফের কিতাব রচয়িতা ও সমকালীন ইসলামী জগতে শীর্ষস্থানীয় মুফতীদের একজন। গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী শাহ সুফি হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ (ক.) প্রতি চান্দ্র মাসের ২২ তারিখ তাঁকে দাওয়াত দিতেন ও তাঁর মৌলুদ শরিফ শ্রবণ করে ‘মারহাবা মারহাবা’ বলতেন।
➤ মাতার নাম: সৈয়দা নসিমা খাতুন, তিনি হাটহাজারী থানার বুড়িশ্চর গ্রামের মীর বাড়ির সম্ভ্রান্ত পরিবারের বিদুষী রমনী ছিলেন।
➤ জন্মস্থান: চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার অন্তর্গত ফরহাদাবাদ গ্রাম।
➤ বংশ পরিচয়: হযরত রাসুলে করিম (দ.)’র ৪৫তম বংশধর সৈয়দ আলিম উদ্দিন (র.) নবাব ফরহাদ খানের প্রধান বিচারপতি কাজী সৈয়দ নুরুদ্দিন প্রকাশ নুরকাজী বংশের কন্যা বিবাহ করে উক্ত স্থানে বসবাস করতে থাকেন। তাঁরই বংশে আল্লামা ফরহাদাবাদীর জন্ম। কাজী সৈয়দ নুরুদ্দিনের প্রসিদ্ধি হেতু তাঁর বংশ পরম্পরাও ‘নুর কাজী বংশ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কাজী সৈয়দ নুরুদ্দিন গৌড় নগরে বিচারপতির পদে আসীন ছিলেন। ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে তথায় মহামারীর সময় তিনি সপরিবারে চট্টগ্রাম হিজরত করে আসেন। সৈয়দ আলিম উদ্দিনের বংশধরদের মধ্যে সৈয়দ শাহাদুল্লাহর ভিটাতেই বর্তমানে আল্লামা ফরহাদাবাদী (ক.)’র রওজা শরিফ, রওজা পুকুর ও বসতবাড়ী অবস্থিত। সৈয়দ শাহাদুল্লাহর দ্বিতীয় পুত্র মওলানা সৈয়দ আবদুল করিমের দ্বিতীয় পুত্র হলেন আল্লামা ফরহাদাবাদী (ক.)।
➤ বিবাহ ও সংসার জীবন: আল্লামা ফরহাদাবাদী প্রায় ২৫ বৎসর বয়সে বুড়িশ্চর মৌজার তাঁর মামা সৈয়দ বদিউদ্দিনের কন্যা সৈয়দা শফিউন নেসার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পনের বৎসর পর্যন্ত তাঁদের কোন সন্তান-সন্ততি হয়নি। তাঁর বড়ভাই মওলানা সৈয়দ আবদুল গফুর সাহেব ইন্তিকাল করায় তিনি পিতার আদেশক্রমে ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে বিবাহ করেন। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম সৈয়দা ফাতিমা খাতুন। ফাতেমা খাতুনের গর্ভে তাঁর একমাত্র পুত্র ও তিন কন্যা জন্মগ্রহণ করেন।
➤ সামাজিক জীবন: পরিবার ও সমাজ জীবনে তিনি পুরোপুরিই রাসূলুল্লাহ্ (দ.)’র আদর্শ অনুসরণ করে চলতেন। তিনি আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করতেন। আত্মীয়-স্বজনের খবরাখবর নিতেন এবং তাঁদের বাড়িতে খাদ্যদ্রব্য পাঠাতেন। আত্মীয় স্বজনকে খুবই স্নেহ-মমতা করতেন এবং তাঁদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সচেষ্ট থাকতেন। তিনি আগামী দিনের জন্য কিছু সঞ্চয় করে রাখতেন না। নিজ পরিবারের সামান্য পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য রেখে বাকি অংশ দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন। তিনি ধর্মভীরু ও স্বাধীনচেতা ছিলেন এবং আড়ম্বরবিহীন জীবন-যাপন করে গেছেন। পাড়া প্রতিবেশীর সাথে আল্লামা ফরহাদাবাদীর ব্যবহার ঠিক নায়েবে রাসূলের ব্যবহারের মত ছিল। তিনি জীবনে কাউকেও কটু কথা বা কারো মনে কষ্ট পায় এমন কথা বলেন নি। সবসময় নম্রভাষায় কথা বলতেন। তিনি পাড়া প্রতিবেশীর অভাব মোচনে আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। কারো বিপদ-আপদের কথা তিনি জানতে পারলে যে কোন প্রকারে বিপদ মুক্ত করতে চেষ্টা করতেন। কারো ঘরে রান্না হয় নি বা কেউ উপোষ আছে জানতে পারলে তিনি না খেয়ে তাঁদেরকে খাওয়াতেন। তাঁর খাওয়ারত অবস্থায় যদি শুনতে পান যে, আশে পাশে কারো ঘরে খাবার রান্না হয় নি তখন তিনি আর এক লোকমা খাবারও খেতেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের ঘরে খাবার পৌঁছিয়ে দেওয়া না হত। উল্লেখ্য, তিনি তৈরী খাবার উপবাসীর ঘরে পাঠানোর পর পুনঃ খাবার তৈরি করেই খেতেন। একবার তাঁর এক স্ত্রী তাঁকে বললেন যে, ‘উপবাসীর ঘরে চাল পাঠিয়ে দেওয়া হোক।’ তিনি বললেন, ‘চাল তোমরা পাক করে খাও এবং উপবাসীর ঘরে তৈরী ভাত ও তরকারী পাঠিয়ে দাও, কারণ তারা বড়ই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।’
➤ জ্ঞান সাধনা: জীবনের পাঠ্যাবস্থা থেকে ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি জ্ঞান-সাধনা করে গেছেন। তিনি এতই গভীর অধ্যয়ন করতেন যে, অধ্যয়ন করতে করতে অনেক সময় রাত শেষ হয়ে যেত। তিনি তাঁর চতুর্পাশ্বের কিতাব রেখে মাঝখানে বসতেন এবং কিতাব পড়তে পড়তে রাত শেষ করে দিতেন। শীতের রজনীতে লোকজন যখন লেপের তলায় গভীর নিদ্রায় মগ্ন থাকতেন, শীতের কষ্ট সহ্য করে তিনি বৃদ্ধাবস্থায়ও অধ্যয়ন কাজে রত থাকতেন। সময় সময় কিতাব দেখতে দেখতে তিনি কিতাবের উপর ঘুমিয়ে পড়তেন। তিনি অনেক ছাত্রকে নিজের ঘরে খাইয়ে দাইয়ে এলেম শিক্ষা দিয়েছেন। স্বনামধন্য মাইজভাণ্ডারী গীতিকার মাওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনী (র.)’র পুত্র মমতাজুল মোহাদ্দেসীন মৌলানা ওবাইদুল আকবর সাহেব বলেছেন যে, তাঁর পাঠ্যাবস্থায় তাঁর পিতা রেঙ্গুন ছিলেন। তিনি আল্লামা ফরহাদাবাদী (র.)'র সঙ্গে সঙ্গে থেকে বিদ্যা শিক্ষা করেছেন। বিদ্যার্থী ও জ্ঞানীলোকদের তিনি যথেষ্ট সম্মান করতেন। অর্ধশিক্ষিত লোককেও তিনি মৌলভী বলে সম্বোধন করতেন যাতে আওয়াম লোকেরা অর্ধশিক্ষিত বলে তাদেরকে অবহেলা না করেন।
➤ আধ্যাত্মিক জীবনের সূচনা: আল্লামা ফরহাদাবাদী (র.) প্রাথমিক জীবনে মাইজভাণ্ডার দরবারের বিরোধী ছিলেন। ওয়াজ নসিহতে এ দরবারের সমালোচনাও করতেন। এক রাতে তিনি গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী হযরত শাহ্সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.)-কে স্বপ্নে দেখেন। স্বপ্ন দেখার পর তিনি একদিন মাইজভাণ্ডার যান এবং গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী তাঁর নাম, পিতার নাম ও বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞেস করেন এবং পরিচয় পেয়ে তাঁকে সসম্মানে বসালেন। তাঁর পিতা মওলানা সৈয়দ আবদুল করিমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি কিছুক্ষণ গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর হুজুরায় অবস্থান করেন। তিনি তাঁকে কিছু মিষ্টান্ন দিয়ে মেহমানদারী করেন। তাঁর সংশ্রবে এসে তিনি রূহানী ফয়েজ প্রাপ্ত হন এবং মাইজভাণ্ডারের প্রতি সন্দেহ দূরীভূত হয় এবং তাঁকে হক্কানী অলি হিসেবে গ্রহণ করেন। তারপর থেকে তিনি মাইজভাণ্ডারে গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর খেদমতে আসা যাওয়া করতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে তাঁর হাতে বায়াতও গ্রহণ করেন।
➤ খেলাফত অর্জন: হযরত গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর একনিষ্ঠ আজীবন খাদেম মৌলভী সৈয়দ মিয়া ফকির (র.) প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আল্লামা ফরহাদাবাদী (ক.)-কে হযরত গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.) কর্তৃক আনুষ্ঠানিক খেলাফত প্রদানের ঘটনাটি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা শীত মৌসুমে হযরত গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.) তাঁর হুজুরা শরিফের সামনে একটি হাতল বিশিষ্ট চেয়ারে উপবিষ্ট ছিলেন। অনেক আশেক-ভক্ত তাঁকে বেষ্টন করে চারদিকে দাঁড়িয়ে তাঁর অমৃতবাণী শুনছেন। তথায় আল্লামা ফরহাদাবাদী (ক.)ও উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাঁর রচিত ‘তোহফাতুল আখ্ইয়ার ফি দাফ-ই শরারাতিল আশরার’ কিতাবটি বের করে তা হযরত গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর কাছে পাঠ করার অনুমতি চাইলেন। হযরত গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী তাঁকে অনুমতি দিলেন। তিনি অতীব আদবের সাথে কিতাবটি পাঠ করতে আরম্ভ করেন। হযরত গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী শুনে আনন্দিত হলেন এবং এক পর্যায়ে আল্লাহ্ পাকের দরবারে সজিদা করলেন। উপস্থিত সবাই গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর সাথে সজিদায় পতিত হলেন। সজিদা থেকে উঠে তিনি আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেন। উপস্থিত সবাই তাঁর সাথে মোনাজাতে শরিক হলেন। মোনাজাত শেষে তিনি আল্লামা ফরহাদাবাদী (ক.)-কে লক্ষ্য করে বলেন, “আমার ছয়টি কিতাব থেকে একটি তোমাকে দিলাম। আমার বারটি কাছারী থেকে একটি তোমাকে দিলাম। আমার বারটি সামা (বাতি) আছে তৎমধ্যে একটি তোমার। আমার বারজন ইমামের মধ্যে একজন তোমাকে নিযুক্ত করলাম।”
উল্লেখ্য, আল্লামা ফরহাদাবাদীর রচিত এই কিতাবে গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.) দস্তখত করেছেন। ফলে কিতাবটি বিজ্ঞ মহলে প্রশ্নাতীতভাবে গৃহীত হয়।
➤ মোনাজারায় অংশগ্রহণ: আল্লামা ফরহাদাবাদী জীবদ্দশায় অসংখ্য মোনাজারায় নেতৃত্ব প্রদান করেন, তৎমধ্যে কয়েকটি হল-
১. বার্মার (মায়ানমার) রেঙ্গুনে ‘মোল্লা মসজিদ’ সম্পর্কীয় মোনাজারা।
২. রেঙ্গুনে ৪০ বছর যাবৎ ইমামতিতে নিযুক্ত ছদ্মবেশি খ্রিস্টান গুপ্তচরের মুখোশ উন্মোচন।
৩. কুমিল্লার চিওড়া হাইস্কুল ময়দানে মোনাজারায় মাইজভাণ্ডারী তরিকার যথার্থতা প্রতিপাদন।
৪. রাউজানের সুলতানপুরের মোনাজারায় নেতৃত্ব দান।
৫. ফেনীর মোনাজারায় নেতৃত্ব দান।
৬. আওলাদে রাসুল (দ.) মওলানা সৈয়দ আবদুল হামিদ বোগদাদী (র.)'র সাথে বাহাস।
➤ আল্লামা ফরহাদাবাদী (ক.) রচিত কিতাবাদী:
১. তোহফাতুল আখইয়ার ফি দফ-ই শারারাতিল আশরার।
২. আত্ তাওজিহাতুল বাহিয়্যাহ ফি তারদিদে মা-ফিত তানকিহাতিস সুন্নিয়াহ। (এটা তৎকালে মিশর জামেউল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের আলেমগণ কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছিল এবং পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল।)
৩. শাওয়াহিদুল ইবতালাত ফি তারদিদে মা ফি রাফেউল ইশকালাত। (ওহাবী মতবাদের খণ্ডন।)
৪. মেরাতুল ফান ফি শারহে মোল্লা হাসান। (ইসলামী বিধানশাস্ত্র বিষয়ক ব্যাখ্যা গ্রন্থ)
৫. গায়াতুত তাহকিক ফি মা ইয়াতাল্লাকু বিহি তালাকুত তালিক। (তালাক বিষয়ক)
৬. দাফিউশ শোবহাত ফি জাওয়াজিল ইস্তিজারে আলাত তোয়াত। (ধর্মীয় কাজ করে বিনিময় নেওয়া প্রসঙ্গে।)
৭. রাফিউল গেশাবী ফি তারদিদে মা ফি ইশায়াতিল ফাতাবী। (জুমার খোতবা সম্পর্কিত)
➤ আল্লামা ফরহাদাবাদীর শানে মণীষী মন্তব্য:
১. অছিয়ে গাউসুল আযম হযরত মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী:
অছিয়ে গাউসুল আযম হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী (ক.) তাঁর সুবিখ্যাত ‘বেলায়তে মোতলাকা’ গ্রন্থে লিখেছেন, “মাওলানা আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (র.) সাহেব একজন জবরদস্ত মহান কামেল আলেম ও ইসলামী বিধান শাস্ত্র বিশারদ মুফতী ছিলেন। তাঁহার ফতোয়া সুদূর মিশর দেশে জামেউল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের আলেমগণ কর্তৃক প্রশংসিত হইয়াছিল। তাঁহার কলব মোবারক সদা সর্বদা খোদার জিকিরে জাকের জারী থাকিত। যাহারা তাঁহাকে দেখিয়াছেন তাহারা নিশ্চয় অবগত আছেন। তিনি নেহায়েত সাদাসিদা প্রকৃতির দীনদান কামেল মোত্তাকী আলেম ছিলেন।”
২. আল্লামা সৈয়দ মছিহ্ উল্লাহ মির্জাপুরী:
হযরত গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী শাহসুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.)’র খালাতো ভাই, পীর ভাই ও বেয়াই, জগদ্বিখ্যাত আলেম, আল্লামা শাহসুফি সৈয়দ মছিহ উল্লাহ্ মির্জাপুরী (ক.) আল্লামা সৈয়দ আমিনুল হক ফরহাদাবাদীর বাল্যকালে তাঁকে ধলই মৌজার বিশিষ্ট ব্যক্তি মরহুম রমজান আলী চৌধুরীর নামাযে জানাযায় দেখতে পান ও সমবেত মুসল্লীদের উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেছিলেন, “আল্লামা সৈয়দ আবদুল করিম সাহেবের এই ছেলে ভবিষ্যতে একজন জগদ্বিখ্যাত আলেম হবেন এবং তাঁর জ্ঞানের আলোকে সমগ্র পৃথিবী আলোকিত হবে।” তাঁর এ ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হয়েছিল।
৩. সৈয়দ আবদুল হামিদ বোগদাদী:
আউলাদে রাসূল (দ.), ব্রিটিশ আমলে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতিব, প্যালেস্টাইন যুদ্ধের গাজী ও শহিদ হযরত মওলানা শাহসুফি সৈয়দ আবদুল হামিদ বোগদাদী (র.) পবিত্র হারাম শরিফ বা কা’বা শরিফের বারান্দায় আরববাসীদের আল্লামা ফরহাদাবাদী (ক.)’র পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, “তোমরা আরবীরা কি আরবী জান? আরবী জানে এই আল্লামা।” তিনি আল্লামা ফরহাদাবাদীর ডান হাত ধরে আরববাসীদের বলেন, “এই সরু হাতগুলি হাড়ের নয়। হীরার বলা যেতে পারে। তাঁর লিখনির মধ্যে হীরার ধার আছে। বাংলা মুল্লুকে তাঁর মত এরূপ লায়েক আলেম আর দেখিনি। যদিও কোন কোন মাসয়ালায় আমি তাঁর সাথে একমত নই।”
৪. আল্লামা গাজী শেরে বাংলা:
ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী সৈয়দ আজিজুল হক শেরে বাংলা (র.) তাঁর রচিত ‘দিওয়ানে আজিজ’ নামক বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থে আল্লামা ফরহাদাবাদীর শানে যে মর্যাদাপূর্ণ লক্ববসমূহ উল্লেখ করেছেন সেসবের বাংলা উচ্চারণ:
“দরমদহে পেশওয়ায়ে আলেমা, মুক্তাদায়ে ফাজেলা, ফখরে আরেফা, সৈয়দুল মুনাজেরিন, রয়িসুল মুতাকাল্লেমিন, আলেমে ক্বমক্বাম, ফাদেলে তমতাম্, আলেমে ইয়ালমায়ী, ফাজেলে লওজেয়ী, আল হিবরুল ক্বমক্বাম, ওয়ান্নাহরীরুত তমতাম, মারজাউল মশায়েখুল আ’লাম, সনদুল মুহাক্কেক্বিন, তাজুল মুদাক্কেক্বিন, সাহেবুত তাহরীর ওয়াত তাসনিফ, হুজ্জাতুল খালক, বুক্কাতুল খালফ, শায়খুল ইসলাম হযরত আলহাজ আল্লামা শাহ সৈয়দ আমিনুল হক ফরহাদাবাদী হাটহাজারী, আলাইহির রাহমত রাব্বিহিল বারী।”
৫. আল্লামা আহমদ রেজা খান ফাজেলে বেরলভী: মুজাহিদে আহলে সুন্নাহ হযরত আল্লামা শাহ আহমদ রেজা খান ফাজেলে বেরলভী (র.) আল্লামা ফরহাদাবাদী (ক.) রচিত কিতাব দেখে আল্লামা ফরহাদাবাদীর কাছে চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলেন এই বলে যে, ‘আপনার কিতাব আমি দেখেছি। আপনার মত দক্ষ আল্লামা আমার গবেষণা কেন্দ্র তথা কুতুবখানায় প্রয়োজন। আপনার সংসার চালাতে যা খরচ দরকার তা আমি দেব। আপনি সত্তর আমার এখানে চলে আসুন।’ আল্লামা ফরহাদাবাদী (ক.) উত্তর পাঠিয়েছিলেন এই বলে যে, “আমি গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর কুতুবখানায় আছি। আপনার কুতুবখানায় যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
৬. হযরত মওলানা দোস্ত মোহাম্মদ: আউলাদে রাসূল (দ.) হযরত মওলানা শাহসুফি সৈয়দ আবদুল হামিদ বোগদাদী (র.)’র বিশিষ্ট খলিফা, গহিরা আলিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা দোস্ত মোহাম্মদ (র.) আলেম-ওলামার মজলিসে বলেছেন, “হানাফী মজহাবের ইমাম আযম আবু হানিফা (র.)’র পর যদি কোন ইমাম আযম পৃথিবীতে আসতেন ধর্মীয় মাসায়েলা-ফতোয়া ইত্যাদির ব্যাপারে সমাধান দেওয়ার জন্য, তবে আল্লামা সৈয়দ আমিনুল হক ফরহাদাবাদী (ক.) অবশ্যই ইমাম আযম হতেন।”
৭. ফখরে বাংলা মাওলানা আবদুল হামিদ: চট্টগ্রামের স্বনামখ্যাত আলেমে দ্বীন ফখরে বাংলা হযরত মওলানা আবদুল হামিদ সাহেব (র.) আল্লামা ফরহাদাবাদী (ক.)’র সাথে মোনাজারা ও বাহাসে পেরে না উঠে শেষ পর্যন্ত স্বীকার করলেন ও বললেন, “আমাকে এলমের স্বীকৃতি স্বরূপ যদিওবা সরকার ফখরে বাংলা খেতাব দিয়েছেন, কিন্তু আমি দেখতেছি, এই খেতাব পাওয়ার যোগ্য পাত্র হলেন আপনিই।” তিনি আরো বলেন, “আপনার এলেম একসের আর আমার এলেম তার তুলনায় একপোয়া মাত্র।”
➤ ওফাত শরিফ: তিনি ঊনাশি বছর বয়সে ২৭ অগ্রহায়ণ ১৩৫১ বঙ্গাব্দ; ২৭ জিলহজ্ব ১৩৬৩ হিজরী; ১৩ ডিসেম্বর ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক রোজ বুধবার জোহরের সময় পরলোক গমন করেন। পরদিন বাদে আসর একমাত্র পুত্র মওলানা শাহসুফি সৈয়দ ফয়জুল ইসলাম ফরহাদাবাদীর ইমামতিতে জানাযা শেষে বর্তমান রওজা শরিফে সমাহিত হন। প্রতি বছর ২৭ অগ্রহায়ণ ফরহাদাবাদ দরবার শরিফ তাঁর রওজা প্রাঙ্গনে উরস শরিফ অনুষ্ঠিত হয়।
Holy Urs Mubarak!!!
#Urs #UrsMubarak #UrsSharif #Sufi #SufiLive #SufiWorld #SufiFestival #SufiCentre #SufiOrder #SufiMedia #World #Global #GlobalSufiServices #GlobalSufiMedia #Tasawwuf #Sufism #التصوف #Islam